তাওরাত, জবুর ও ইঞ্জীল কি পরিবর্তিত হয়েছে?

যদি আপনাকে প্রশ্ন করা হয় “আল্লাহ্‌র কালাম কি পরিবর্তনশীল?” অন্যকথায় আল্লাহ্‌র কথার কি নড়চড় হয়। আমি জানি না আপনি কি উত্তর দিবেন, তবে আমার উত্তর হচ্ছে – “না” কখনোই পরিবর্তন হয় না। বিষয়টি আর একটু পরিষ্কার হবার জন্য কোরআনের একটি অংশ পড়া যেতে পারে।

“যারা ঈমানদার ও পরহিজগার। তাদের জন্য ইহ-পরকালের সুসংবাদ; আল্লাহ্‌র কালাম অপরিবর্তনীয়। এটাই মহা সাফল্য।”

সূরা ইয়ূনুস (১০) – আয়াত ৬৪
অর্থাৎ কোনভাবেই আল্লাহ্‌র কথার পরিবর্তন হয় না।

এবারের প্রশ্নটি হল – কে আমাদের জন্য দ্বীন দিয়েছেন এবং কার কাছ থেকে কিতাব নাজিল হয়েছে? আসুন কোরআন এ ব্যাপারে কি বলে তা দেখি:

“তিনি (আল্লাহ্‌) তোমাদের জন্য দ্বীন নির্ধারণ করেছেন, যার আদেশ দিয়েছেন নূহকে। যে নির্দেশ আপনাকে {মুহম্মদ (স:)} দিয়েছি, তার হুকুম ইবরাহীম, মূসা ও ঈসাকে দিয়েছি, দ্বীন কায়েম করো, মতভেদ করো না।…….”

সূরা শূরা (৪২) – আয়াত ১৩
অর্থাৎ শুধুমাত্র কিতাবগুলো আল্লাহ্‌র কাছ থেকে তাদের কাছেই আসেনি বরং তিনি আরও বলছেন যেন রাসুল তাদের সাথে কোন মতবিরোধ না করেন। কেন আল্লাহ্ এমন কথা বলেছেন? কারণ পূর্বের কিতাবগুলো তারই নাজিলকৃত এবং আমরা এর আগে দেখেছি আল্লাহ্‌র কোন কথা বা কালাম পরিবর্তন হয় না। তাই তিনি রাসুলকে সাবধান করে দিচ্ছেন যেন তিনি কোন মতভেদ তৈরী না করেন।

তাহলে বহুল প্রচলিত একটি বিষয়ে বা উক্তিতে এবার যাই। তাহল – “পূর্বের কিতাবগুলো অর্থাৎ তাওরাও, জবুর ও ইঞ্জীল বিকৃত বা পরিবতিত হয়ে গেছে।” বিষয়টি কি আসলে সত্যি নাকি গুজব বা বানোয়াট? আসুন দেখি কোরান এ বিষয়ে আমাদের কাছে কি বলে?

তাহলে বহুল প্রচলিত একটি বিষয়ে বা উক্তিতে এবার যাই। তা হল: “পূর্বের কিতাবগুলো অর্থাৎ তাওরাও, জবুর ও ইঞ্জীল বিকৃত বা পরিবতিত হয়ে গেছে” এই বিষয়টি আসলে কি সত্যি নাকি গুজব বা বানোয়াট? আসুন দেখি কোরআন এ বিষয়ে আমাদের কাছে কি বলে?

“আমিই আপনার কাছে সত্য কিতাব পাঠিয়েছি যা পূর্বের কিতারের সমর্থক ও হিফাজতকারী। সুতরাং আল্লাহ্‌র নাযিলকৃত নীতি অনুসারেই ফায়সালা করুন।”

সূরা মা-ইদাহ্ (৫) – আয়াত ৪৮
লক্ষ্য করে দেখুন, আল্লাহ্ তিনি রাসুলকে বলছেন যে, আমি তোমাকে যে কিতাব দিয়েছি তা হল পূর্বের কিতাবের সমর্থক, অর্থাৎ তার হিফাজতকারী। যদি পুর্বোক্ত কিতাবগুলো বিকৃতই হয়ে যাবে তবে কেন আল্লাহ্ কোরআনকে সেগুলোর সমর্থক বলবেন? তবে কি আল্লাহ্ কোন ভুল করছেন বা তিনি মিথ্যা বলছেন? তওবা, তওবা। সেসব দূরে থাকুন। মনে রাখুন আল্লাহর কোন কথা বা কালামের কোন পরিবর্তন হতে পারে না এবং তা আমরা পূর্বেই জেনেছি। তাই যদি আমরা বলি পূর্বের কিতাবগুলো পরিবর্তন বা বিকৃত হয়েছে তবে আমরা নিজেদেরকে ভুলাই এবং আল্লাহ্‌র কালাম আমাদের মধ্যে নাই।

বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য কোরআন থেকে নিচের অংশটি পড়া যেতে পারে:

“হে ঈমানদারগন! তোমরা আস্থাবান হও – আল্লাহ্, রাসুল, রাসুলের কাছে নাজিলকৃত কিতাব ও পূর্বেঅবতীর্ণকিতাবে! যেআল্লাহ্‌, ফেরেশতা, কিতাব, রাসুল ও কিয়ামতকে অস্বীকার করে, সে গোমরাহীতে রয়েছে।”

সূরা নিসা (৯২) – আয়াত ১৩৬
যদি পূর্বের কিতাবগুলো বিকৃত তথা পরিবর্তিত হয় তবে আল্লাহ্‌ কেন আমাদেরকে বলছেন যেন আমরা আস্থাবান হই সেই পূর্বেপ্রেরিত কিতাবের উপর এবং তিনি এ কথাও বলছেন যে, যদি আমরা তার কিতাবে বিশ্বাস না করি তবে আমরা গোমরাহীতে রয়েছি। সোজা কথায় আমরা পথ ভ্রষ্ট হয়েছি। নিজেকে প্রশ্ন করুন “যদি পূর্বের কিতাবগুলো পরিবর্তিত হয় তবে আল্লাহ্‌ কি জানতেন না?” যদি জানেন তবে কেন তিনি তার পরেও সেগুলোতে ঈমান আনতে বলছেন? আমার মনে হয় উত্তরটি অনেক সহজ এবং আপনি নিজেই তা জানেন। কারন হচ্ছে এগুলো বিকৃত বা পরিবর্তিত হয়নি। কারণ আল্লাহ্ নিজেই সেই সাক্ষ্য দিচ্ছেন। আর এর পরেও যদি আপনি মনে করেন বা বলেন এগুলো বিকৃত হয়েছে তবে আপনি কি আল্লাহ্‌র কালামকে মিথ্যা বলছেন না? উনি কখনো বলেন নি যে আগের কিতাবগুলোর লেখা বিকৃত হয়েছে।

এখনো যদি আপনার মনে সন্দেহ থেকে থাকে তবে কোরআনে বর্নিত নিচের আয়াতটি লক্ষ্য করুন।

“নাযিলকৃত বিষয়ে সন্দেহ থাকলে তাদের জিজ্ঞেস করুন, যারা আপনার আগে থেকে কিতাব পড়ে। রবের তরফ থেকে আপনার কাছে সত্যই এসেছে। আপনি সন্দেহের উর্ধে থাকুন। আপনি আল্লাহ্‌র আয়াত অমান্যকারীদের শামিল হবেন না, নইলে ক্ষতিগ্রস্ত হবেন।”

সূরা ইয়ূনুস (১০) – আয়াত ৯৪-৯৫: ৯৪
এখানে রাসুলকে বলা হচ্ছে, যদি তার কাছে নাযিলকৃত বিষয়ে তার কোন সন্দেহ থাকে তবে যেন তিনি তার পূর্বেযারা কিতাব পড়েন তাদের কাছে যান এবং জিজ্ঞেস করেন। তবুও তিনি যেন সন্দেহে না থাকেন বা সন্দেহকারীদের দলে যোগ না দেন। একটু ভেবে বলুন তো কোরআন কার কাছে নাজিল হয়েছিল? আমার বিশ্বাস এটি উত্তর দিতে ভাবার দরকার নেই। কোরআন মতে আল্লাহ্ তিনি রাসুলকে অর্থাৎ যাকে কোরআন দিয়েছেন, তাকে বলছেন যেন কোরআন এর আগের কিতাব যারা পড়ে তাদের কাছে গিয়ে প্রয়োজনবোধে তিনি পরিষ্কার হন। কোরআন নাজিল হবার আগে নাজিল হয়েছে তাওরাত, জবুর ও ইঞ্জীল। সহজেই বোঝা যায় যে, যারা আপনার আগে থেকে কিতাব পড়ে একথা বলে তাদেরকেই বোঝানো হয় যারা তাওরাত, জবুর ও ইঞ্জীল পড়েছিলেন। তাই একথা বলা খুবই অযেীক্তিক হবে যে তাওরাত, জবুর ও ইঞ্জীল বিকৃত হয়েছে। কারণ এগুলো বিকৃত হলে আল্লাহ্ কখনোই রাসুলকে এই কিতাবগুলো পাঠকারীদের কাছে যেতে বলতেন না।

পূর্বের কিতাব নিয়ে আপনার মনে যদি এখনো কোন ধরণের প্রশ্ন থাকে তবে আপনার জন্য এই কোরআন-আয়াতটি পড়া খুবই জরুরি।

“বলুন: হে আহলেকিতাবগন! তোমাদের কোনও বুনিয়াদ নেই যতক্ষণ না তাওরাত, ইঞ্জীল ও রবের তরফ থেকে নাজিলকৃত বিষয় কায়েম করো। রবের তরফ থেকে আপনার কাছে নাজিলকৃত বিষয় তাদের অনেকের কুফরী ও অবাধ্যতা বাড়াবে। তাই কাফিরদের জন্য দু:খ করবেন না।”

সূরা মা-ইদাহ্ (৫) – আয়াত ৬৮
সহজ কথায় আপনি যদি পূর্বের কিতাবগুলোতে অর্থাৎ তাওরাত, জবুর ও ইঞ্জীলে বিশ্বাস না করেন তবে আপনার কোন বুনিয়াদ তথা ভিত্তি নাই। এবং আপনি বিপথে আছেন এবং কুফরী ও অবাধ্যতায় আছেন। আল্লাহ্ বলছেন – আপনার জন্য যেন দু:খ না করা করে। কারণ আপনাকে বোঝানোর অনেক চেষ্টা করা হয়েছে। একটু ভাবুন! যদি তাওরাত, জবুর ও ইঞ্জীল বিকৃত হয় তবে কেন আল্লাহ্ বলবেন যে, এগুলোর উপর ঈমান না আনলে আমাদের কোন ভিত্তি নাই। যদি এর পরেও আপনি বলেন যে, না! পূর্বের কিতাবগুলো বিকৃত তথা পরিবর্তিত হয়েছেন তবে আপনার জন্য দুটি প্রশ্ন আমি রাখছি। দয়া করে ভেবে নিজেকে উত্তর দিন। “আপনি কি আল্লাহ্কে ও তার কালামকে মিথ্যা বলছেন?” এবং “আপনি কি আল্লাহ্‌র সকল কালাম পালন করছেন?” অন্যের কথায় প্রভাবিত হবেন না। নিজে কিতাব পড়ুন এবং সঠিক সিদ্ধান্ত নিন। দয়া করে মিথ্যা বা ভুলের মধ্যে থাকবেন না।

আল্লাহ্‌ আপনার উপর রহমত দান করুন। আমিন।

আপনার কোন প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! চ্যাটে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।

#কথাপকথন

আমরা আপনাকে কথোপকথনে আমন্ত্রণ জানাই যেখানে আপনার জীবনের কঠিন বিষয়গুলো নিয়ে আরও গভীরভাবে আমাদের অভিজ্ঞ টিম মেম্বারদের সাথে আপনি আলোচনা করতে পারবেন।

Share:

আপনি পছন্দ করতে পারেন

‘আমি আর পিতা এক।” ‘ইউহোন্না 10:30 তোমরা আমার নামে যা কিছু চাইবে তা আমি করব, যেন পিতার মহিমা পুত্রের মধ্য...
এর মধ্যে আমরা মসীহের কেরামতী কাজ, কর্তৃত্ব এবং স্বভাব দেখেছি। এখন তার নিজের বিষয়ে মসীহের কিছু দাবি আমরা দেখব। অন্যান্য...
মৃত্যুদের জীবন দেওয়ার সাথে সম্পর্কিত মসীহের আরেকটি ক্ষমতা হল শেষ বিচারে মৃতদের বিচার করার জন্য তার কর্তৃত্ব। সূরা যুখ্‌রুফ ৪৩:৬১...