সাধারণত যদি কাউকে জিজ্ঞাস করা হয় “পাপের ক্ষমা পেতে আমাদের কি করা উচিত?” প্রায় প্রত্যেক মানুষ বলবে “পাপের ক্ষমার জন্য আমাদেরকে আল্লাহর কাছে ক্ষমা চাইতে হবে এবং আমাদের ভাল ভাল কাজ করতে হবে । কিন্তু ক্ষমা চাওয়ায় কি যথেষ্ট? আমরা যদি কিতাব দেখি এবং গভিরভাবে চিন্তা করি, তবে আমরা বুঝবো যে পাপের জন্য ক্ষমা চাওয়া ও ভাল কাজ করায় যথেষ্ট নয়।
উদাহারন শুরুক, যেকোন দেশে, কেউ যদি রাষ্ট্রপতির গাড়ি ভাঙ্গে তবে পলিশ সেই লোকটিকে কি করবে? অবশ্যই সেই লোকটিকে পুলিশের দ্বারা শাস্তিপ্রাপ্ত হতে হবে।
কিন্তু যদি সেই ব্যক্তি পুলিশকে বলে “দয়া করে আমাকে ক্ষমা করুন, আমি আর এরকম করবো না।” তবে পুলিশ কি তাকে ছেড়ে দিবে? অবশ্যই না। কিন্তু কি হবে যদি সে বলে “এখন থেকে আমি ভাল মানুষ হব, আমি গরীবদের টাকা দান করব। শুধু আমাকে ক্ষমা করুন” পুলিশ কি তাকে ক্ষমা করবে? অবশ্যই নয়। কিন্তু কেন?
এর কারণ কি এটা যে ঐ পুলিশ ক্ষমাশীল নয়? না। বরং এর কারণ হচ্ছে, পুলিশ একজন ন্যায় বিচারক। প্রতিটি দেশে অপরাধের জন্য নির্দিষ্ট আইন আছে, এবং আইন অনুসারে কেউ যদি অপরাধ করে, আইন অনুযায়ী তাকে শাস্তি পেতে হবে। যদি পুলিশ ন্যয়বান হয় তবে খুব সহজে সে ক্ষমা করতে পারবে না। কিন্তু পুলিশ যদিও তাকে ক্ষমা করে দেয়, তবে ভাঙ্গা গাড়ীর জন্য কে মূল্য পরিশোধ করবে?
একই ভাবে সৃষ্টিকর্তা ক্ষমাশীল আবার ন্যায় বিচারকও। আমরা তার বিরুদ্ধে পাপ করেছি, এবং আইন অনুসারে আমাদের শাস্তি পেতে হবে। কিন্তু যদি বলি “আল্লাহ্ আমাকে ক্ষমা করুন, আমি এখন থেকে গরীবদের দান করব এবং আমি দিনে পাঁচ ওয়াক্ত নামাজ পড়ব, শুধু আমাকে ক্ষমা করুন।” আল্লাহ ন্যায় বিচারক। তিঁনি খুব সহজে কাউকে ক্ষমা করতে পারেন না। আমরা তাকে ঘুষ হিসেবে ভালকাজ দিতে পারি না।
আসুন আমরা আমাদের গল্পে ফিরে যাই। কি হবে যদি রাষ্ট্রপতি পুলিশের কাছে আসে ও বলে “তাকে যেতে দাও কারণ সে আমার বন্ধু এবং আমি তার অপরাধের জন্য মূল্য পরিশোধ করব। আমি আমার টাকা দিয়ে গাড়ী মেরামত করব।”
এই পরিস্থিতিতে পুলিশ কি তাকে যেতে দিবে? অবশ্যই, কারন যার বিরুদ্ধে অন্যায় করা হয়েছে, সে সেই অন্যায় ক্ষমা করল এবং সে ব্যক্তির হয়ে তার জন্য মুল্য পরিশোধ করল।
একই ভাবে আমরা আল্লাহর বিরুধে পাপ করেছি এবং কিতাব বলে যে পাপের শাস্তি মৃত্যু। কিন্তু আল্লাহ্ আমাদের ভালবাসেন ও ক্ষমা করতে চান। কিভাবে তিঁনি অন্যয্য বিচারক না হয়ে আমাদের ক্ষমা করতে পারেন? তিঁনি আমাদের পাপের মুল্য পরিশোধের জন্য একটি পরিকল্পনা করলেন।
কিতাব বলে আল্লাহ্ তাঁর কালাম হজরত ঈসাকে পৃথিবীতে মানুষ হিসাবে পাঠালেন। তিনি সর্বদায় ভাল কাজ করেছেন। তিনি পাপহীন জীবন যাপন করেছেন এবং আমাদের পাপের জন্য মৃত্যু বরন করেছেন। অর্থাৎ পাপের কারণে আমরা যে শাস্তির যোগ্য ঈসা তা তার নিজের উপর নিয়েছেন। এভাবে আল্লাহ্ তার ন্যয় বিচার ও ভালবাসা একই সাথে দেখালেন, এবং আমাদের পাপের ক্ষমা দিলেন।
কিতাব আরও বলে যে হযরত ঈসাকে কবর দেয়া হয়েছিল এবং তিন দিন পর আল্লাহ্ তাঁকে জীবিত করেন। তারপর তাকে বেহেশতে তুলে নেন। ইঞ্জিল শরীফ এই কথা বলে যে, যে কেউ এই সুখবরে বিশ্বাস করে এবং আল্লাহ্র কালাম অনুসারে জীবন-যাপন করে তাকেও ক্ষমা করা হবে। কিন্তু এর মানে এটা নয় যে আমাদের ভাল কাজ করা বাদ দিতে হবে। আমাদের ভাল কাজ করা চালিয়ে যেতে হবে। কারণ পাপের ক্ষমার জন্য আমরা ভাল কাজ করি না, কিন্তু আমাদের ক্ষমা করা হয়েছে এজন্য আমরা ভাল কাজ করি। আমাদের ক্ষমা করার জন্য আমরা আমাদের ভাল কাজের দ্বারা আল্লাহ্কে ধন্যবাদ জানাই এবং লোকদের প্রতি আমাদের ভালবাসা দেখাই।
তাই আসুন কিতাবিয় সত্য প্রথমে জানি এবং মানি। অতঃপর অন্যদের জানাই। আল্লাহ্র রহমত আপনার প্রতি বর্ষিত হোক। আমিন।
আপনার কোন প্রশ্ন বা মন্তব্য থাকলে আমরা শুনতে চাই! চ্যাটে আমাদের সাথে যোগাযোগ করুন।