এর মধ্যে আমরা মসীহের কেরামতী কাজ, কর্তৃত্ব এবং স্বভাব দেখেছি। এখন তার নিজের বিষয়ে মসীহের কিছু দাবি আমরা দেখব। অন্যান্য বিষয়ে ঈসা যেমন অদ্বিতীয়, তেমনই এই ক্ষেত্রেও ঈসা মসীহ্র দাবিগুলো অনন্য এবং অদ্বিতীয়, অন্যান্য মানুষ থেকে পুরোপুরি আলাদা। তাই সংক্ষেপে সেই দাবিগুলো আমরা দেখব এখন।
দুনিয়ার নূর
ঈসা মসীহ্ বলেছিলেন, “আমিই দুনিয়ার নূর। যে আমার পথে চলে সে কখনও অন্ধকারে পা ফেলবে না, বরং জীবনের নূর পাবে” (ইউহোন্না ৮:১২)। মূলত ঈসা মসীহ্ এখানে বলছে যে আল্লাহ্র পথে কেউ জীবন যাপন করতে চাইলে তাঁর শিক্ষা অনুসরণ করতে হবে।
আল্লাহ্ কাছে যাওয়ার রাস্তা
প্রায় একই পরিস্থিতিতে কিন্তু কিছুক্ষণ পরে ঈসা মসীহ্ তার সাহাবীদের জুলুমের সহ্য করার জন্য প্রস্তুত করছিলেন। তিনি তাদের বললেন যেন তারা অস্থির না হয়, কারণ বেহেশতের কাছে তাঁকে তুলে নেওয়া হবে এবং তিনি তাদের জন্য বেহেশতে জায়গা প্রস্তুত করে কিয়ামতে আবার ফিরে এসে তাদেরকে বেহেশতে নিয়ে যাবেন। তিনি শেষে বলেছিলেন, “আমি কোথায় যাচ্ছি তার পথ তো তোমরা জান” (ইউহোন্না ১৪:৪)। কিন্তু একজন সাহাবী তাকে উত্তর দিলেন, “হুজুর, আপনি কোথায় যাচ্ছেন তা-ই আমরা জানি না, তবে পথ কি করে জানব?” হযরত ঈসা তাকে বললেন, “আমিই পথ, সত্য আর জীবন। আমার মধ্য দিয়ে না গেলে কেউই পিতার কাছে যেতে পারে না” (ইউহোন্না ১৪:৫,৬)। তিনি যে শুধু আল্লাহ্র কাছে যাওয়ার একটা বিকল্প পথ সেই কথা বলা হয় নি, বরং তিনি আল্লাহ্র কাছে যাওয়ার একমাত্র পথ, তাই হযরত ঈসা মসীহ্ বলেছেন।
তাঁকে বিশ্বাস করে জীবন পাওয়া
হযরত ঈসা যখন মৃত লাসারকে জীবন দিয়েছিলেন তখন তিনি আরেকটি আশ্চর্য দাবি করেছিলেন। লাসারের গ্রামে যাওয়ার রাস্তায় তিনি লাসারের বোন মার্থার সঙ্গে আলোচনা করছিলেন—
মার্থা ঈসাকে বললেন, “হুজুর, আপনি যদি এখানে থাকতেন তবে আমার ভাই মারা যেত না। কিন্তু আমি জানি, আপনি এখনও আল্লাহ্র কাছে যা চাইবেন আল্লাহ্ তা আপনাকে দেবেন।” ঈসা তাঁকে বললেন, “তোমার ভাই আবার জীবিত হয়ে উঠবে।” তখন মার্থা তাঁকে বললেন, “আমি জানি, শেষ দিনে মৃত লোকেরা যখন জীবিত হয়ে উঠবে তখন সেও উঠবে।” ঈসা মার্থাকে বললেন, “আমিই পুনরুত্থান ও জীবন। যে আমার উপর ঈমান আনে সে মরলেও জীবিত হবে। আর যে জীবিত আছে এবং আমার উপর ঈমান আনে সে কখনও মরবে না। তুমি কি এই কথা বিশ্বাস কর?”ইউহোন্না ১১:২১-২৬
এখানে হযরত ঈসা বলেছিলেন যে তার উপর কেউ ঈমান আনলে এবং তাকে অনুসরণ করলে তিনি কখনও দোজখে যাবে না বরং অনন্তকাল আল্লাহ্র কাছে থাকবে।
ক্লান্তদের জন্য বিশ্রাম
“তোমরা যারা ক্লান্ত ও বোঝা বয়ে বেড়াচ্ছ, তোমরা সবাই আমার কাছে এস; আমি তোমাদের বিশ্রাম দেব। আমার জোয়াল তোমাদের উপর তুলে নাও ও আমার কাছ থেকে শেখো, কারণ আমার স্বভাব নরম ও নম্র।”মথি ১১:২৮-৩০
মানুষ বিভিন্ন ধরণের বোঝা বহন করে এবং বিশ্রামের জন্য আকাঙ্ক্ষা করে। তার অনুসারীদের জন্য হযরত ঈসা ঠিক তাই প্রতিজ্ঞা করেছিলেন।
জীবন্ত রুটি
সেই হাজার হাজার মানুষদের অলৌকিক ভাবে খাওয়ানোর ঘটনার পরে হযরত ঈসা নিজের বিষয়ে আরেকটি দাবি করেছিলেন। সেদিন যারা খাবার পেয়েছিল তাদের মধ্যে কিছু লোক পরে ঈসার কাছে ফিরে এসেছিল। কিন্তু অন্তন জীবনের বিষয়ে শিক্ষা পাওয়ার জন্য তারা মসীহের কাছে আসেন নি বরং শুধু পেট ভরে পাওয়ার জন্য এসেছিলেন। তাদের ভুল উদ্দেশ্য দেখিয়ে দিয়ে ঈসা বলেছিলেন,
“আমিই সেই জীবন-রুটি। যে আমার কাছে আসে তার কখনও খিদে পাবে না। যে আমার উপর ঈমান আনে তার আর কখনও পিপাসাও পাবে না।”ইউহোন্না ৬:৩৫
অন্য ভাবে ঈসা মসীহ্ একই কথা বলেছিলেন। তিনি বলছিলেন যে যারা তার কাছে আসে তারা অনন্তকাল বেহেশতে থাকতে পারবে এবং সেখানে তাদের সব প্রয়োজনীয় জিনিস তাদের জন্য জোগাড় করা হবে।
তাহলে এগুলি হল নিজের বিষয়ে হযরত ঈসার কিছু দাবি। বিভিন্ন কথার চিত্র এবং প্রতীক দিয়ে সেগুলি একই সত্য প্রকাশ করে যে, আল্লাহ্র কাছে যাওয়ার রাস্তা হল ঈসা মসীহ্। যারা তাঁকে অনুসরণ করে তাদের খিদে, তৃষ্ণা, মৃত্যু বা গুনাহের ভার ভয় করতে হয় না।
বেহেশতের নিশ্চয়তা
এখন নিজের বিষয়ে ঈসার বিভিন্ন দাবি থেকে সরে গিয়ে আমি দেখাতে চাই কীভাবে বিভিন্ন ধর্মগ্রন্থে তাঁর অনুসারীদের বেহেশতের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়। যেমন সূরা আলে-‘ইমরানে বলা হয়েছে—
“স্মরণ কর, যখন ফিরিশ্তাগণ বলিল, ‘হে মার্ইয়াম! নিশ্চয়ই আল্লাহ্ তোমাকে তাঁহার পক্ষ হইতে একটি কালেমার সুসংবাদ দিতেছেন। তাহার নাম মাসীহ্ মার্ইয়াম-তনয় ‘ঈসা, সে দুনিয়া ও আখিরাতে সম্মানিত এবং সান্নিধ্যপ্রাপ্তগণের অন্যতম হইবে।”সূরা আলে-‘ইমরান ৩:৪৫
এই আয়াতের বিভিন্ন বিস্ময়কর বিষয়ের মধ্যে একটি হল যে এই দুনিয়ায় এবং আখিরাতে (কিয়ামত এবং কিয়ামতের পরে) ঈসা সম্মানিত হবে। কোরআন শরীফে অন্যান্য নবীরা খুলাখুলি ভাবে স্বীকার করেন যে কিয়ামতের পর তাদের কি হবে সেটা তারা জানেন না (যেমন সূরা আহ্কাফ ৪৬:৯)। কিন্তু ঈসার ক্ষেত্রে কোন অনিশ্চয়তা নাই। কিয়ামতে আল্লাহ্ তাকে সম্মান দিবেই। আবার তার অনুসারীদের ক্ষেত্রেও কোন অনিশ্চয়তা নাই কারণ ইঞ্জিলে বলা হয়েছে যে কিয়ামতে ঈসা মসীহ্ তাদেরকে বেহেশতে তাঁর সঙ্গে নিয়ে যাবেন।